বিশেষ প্রতিবেদক:
যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ (ইপিজেড) এলাকায় খাল খননের কাজ চলছে। উপজেলার বালিয়াডাঙ্গার ধলিয়ার বিল থেকে শুরু হয়েছে। ইপিজেড এর সিমানার মধ্যে জমি পড়েছে এমন অনেক মালিক জমি, বাড়ি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ পায়নি। এদিকে ইপিজেডের কাজে ফ্যাসিস্ট আমলের নেতাকর্মীরা এখনো বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছে এমন অভিযোগও উঠেছে।
অনেকের বসতবাড়ির জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাঁদের নতুন ঠিকানায় যেতে হবে। অনেকে অধিগ্রহণ করা জমিতে বোরো মৌসুমে ধান চাষ করতে পারেননি।
ইপিজেড এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি ইপিজেডের অপেক্ষায় রয়েছে। ইপিজেডটি হলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে কাজ শুরু হলেও খুবই ধীরগতিতে চলছে। অনেক জমির মালিক এখনও বুঝে পাননি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ।
এদিকে জমি হুকুমদখল কর্তৃপক্ষ বলছে, জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। এখন ক্ষতিগ্রস্ত জমি, বাড়ি ও ফসলের মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মালিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। ইতিমধ্যে অনেককে চেক প্রদান এবং প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে আরও অনেকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগরের ভাঙ্গাগেট এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের জন্য প্রায় ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৫০০ জন জমির মালিকের মধ্যে মূল্য পরিশোধ কার্যক্রম চলছে।
খাল খননের কাজ করছে ঢাকার হোসেন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড।
এদিকে ইপিজেডের কাজে ফ্যাসিস্ট আমলের নেতাকর্মীরা এখনো বহল তবিয়াতে কাজ করে যাচ্ছে এমন অভিযোগও উঠেছে। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে অভয়নগর থানা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১ জাহীদ গাজী ও কৃষক লীগ নেত্রী ও সাবেক কাউন্সিলর রোকেয়া বেগমের উপর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া লেখাটি তুলে ধরা হলো-
“আওয়ামীলীগের দোসর কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাবেক ক্রসফায়ারের আসামি অভয়নগর থানা কৃষকলীগের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ গাজী এবং রোকেয়া বেগম নামক আর এক মাদককারবারি,প্রাশসনের কতিপয় অসাধু এস আই এবং সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার রাতের শয্যাসংগী, বর্তমানে জাহিদ গাজীর স্ত্রী, ১,২,৩ নং ওয়ার্ড এর সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ও অভয়নগর উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক যৌথভাবে চেংগুটিয়ার নির্যাতিত নেতৃবৃন্দ কে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিক্সন চৌধুরীর যোগসাজশে খোকন সাহেব এবং ঢাকার কতিপয় অসাধু আমলাদের সহযোগিতায় বিএনপি সহ উল্লেখযোগ্য ব্যাবসায়িক নেতৃবৃন্দ পাশ কাটিয়ে ইপিজেড এর বালি ভরাটের কাজের লোভ দেখিয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের সংগঠিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের সুসংগঠিত করতে লিফলেট বিতরণ,ঘরোয়া মিটিং সহ অবাধে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
অতিদ্রুত পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অন্যথায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সভার মত কর্মসূচি দিয়ে এই ন্যাককারজনক ঘটনার রাজনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হবে”।
এই নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকা বাসী।
অন্যদিকে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দল সহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন কিভাবে জাহিদ গাজীর মত একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ইপিজেডের কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে। জাহিদ গাজী স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরেও সে কিভাবে বহাল তবিয়তে এই কাজে থাকতে পারে। যার নামে ৩২ মামলা ছিল। সে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিদেশে পালিয়ে ছিল। যিনি ক্রসফায়ারের আসামি ছিলেন। তার আপন ভাই ক্রসফায়ারে মারা যান। এবং তার রক্ষিতা নামে পরিচিত এক কৃষক লীগ নেত্রী ও সাবেক কাউন্সিলর রোকেয়া বেগম প্রকাশ্যে থানা সহ ইপিজেডের কাজ তদারকি করছে। এমন অবস্থা থাকলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামবো। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও করেন তারা।
জমি অধিগ্রহণের আইনে আছে,
স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭–এর ১৩ ধারার উপধারা ১ ও ২–এ বলা হয়েছে, ‘ধারা ১১ অনুসারে রোয়েদাদকৃত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হলে বা প্রদান করা হয়েছে মর্মে বিবেচিত হলে অধিগ্রহণকৃত স্থাবর সম্পত্তি দায়মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিকট ন্যস্ত হবে এবং জেলা প্রশাসক উক্ত সম্পত্তির দখল গ্রহণ করবেন। কোনো স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের পর জেলা প্রশাসক নির্ধারিত ফরমে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন।’
ধারা ১১–এর উপধারা ১ ও ৩–এ বলা হয়েছে, ‘রোয়েদাদ প্রস্তুতের পর, দখল গ্রহণের পূর্বে, প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা প্রদানের অনধিক ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক উক্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করবেন।’
‘ক্ষতিপূরণের দাবিদার ক্ষতিপূরণের অর্থ গ্রহণ করতে অসম্মত হলে অথবা ক্ষতিপূরণ গ্রহণের জন্য কোনো দাবিদার পাওয়া না গেলে অথবা ক্ষতিপূরণ দাবিদারের মালিকানা নিয়ে কোনো আপত্তি উত্থাপিত হলে অথবা ক্ষতিপূরণের অংশ নির্ধারণে কারো কোনো আপত্তি থাকলে, জেলা প্রশাসক ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবে জমা রাখবেন যা, কোনো পক্ষের আরবিট্রেটর কর্তৃক নির্ধারিতব্য দাবিকে ক্ষুণ্ণ না করে, সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখল গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিশোধিত বলে গণ্য হইবে।’
অভয়নগর ইপিজেড
২০১৯ সালের নভেম্বরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া, মহাকাল, প্রেমবাগ, বালিয়াডাঙ্গা, আমডাঙ্গা, আরাজি বাহিরঘাট, মাগুরা ও রাজাপুর মৌজায় ৫০২ দশমিক ৯০৬ একর জমিতে যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৬৭৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি তিন বছরের। এটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা।