বিশেষ প্রতিবেদক:
যশোরের অভয়নগরে কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে প্রচারণা করছে একটি চক্র।
এর সাথে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ওই এলাকার লোকজনে আলোচনা করছেন। তাদের বক্তব্য, এমনভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে হত্যার ঘটনা আড়ালে গিয়ে এখন সামনে আসছে সাম্প্রদায়িক হামলার গুজব। এতে করে একটি মহল ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। অথচ এই হামলার ঘটনা ঘটেছে শুধু হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কৃষকদলের নিহত নেতা তরিকুল ইসলামের সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই হামলা চালায়।
স্থানীয়রা জানায়, তরিকুল ইসলাম খুন হন পিন্টু বিশ্বাস নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের একব্যক্তির ঘরের মধ্যে। পিন্টুর কথামতো তরিকুল তার বাড়িতে যান ঘেরের চুক্তিপত্র করতে। এরপর যারা হত্যার সাথে জড়িত ছিল তাদের মধ্যে আটক হওয়াদের অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের।
এ পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা আটক হয়েছে তারা হলেন অভয়নগর উপজেলার ভাটবিলা গ্রামের তাপস মণ্ডলের ছেলে স্বদেশ মণ্ডল, ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের সুজিত বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, খুলনার পাইকগাছার হানিরাবাদ গ্রামের মরহুম গোস্ট তরফদারের ছেলে অসীম তরফদার, দেলুটি গ্রামের মরহুম অবনী রায়ের ছেলে প্রজিৎ রায় ও যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের রিপন মহালদার।
অভয়নগর এলাকার অধিকাংশ মানুষের বক্তব্য, তরিকুল খুন হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের একব্যক্তির ঘরের মধ্যে। খুনিদের অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক এবং এই হত্যার ঘটনা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত।
তরিকুল সমর্থকরা ক্ষোভের কারণে প্রথমে প্রধান আসামি পিন্টু বিশ্বাসের বাড়িতে আগুন দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের বাড়িতে হামলা চালায় তারা। এভাবেই ১৩ পরিবারের ১৮টি ঘর পুড়ে যায়। এটিকে পুঁজি করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
যশোরের রাজনীতি সচেতন অনেকেই বলছেন, ঘটনার অবস্থা পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে যাতে হামলা হয় তা করাতে তরিকুলকে খুন করা হলেও হতে পারে।
তরিকুলের সাথে যে কারণে বিরোধ
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘অভয়নগর উপজেলার বেড়েদাহ বিলের বেশিরভাগ জমি ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের মানুষের। সেখান একটি ঘেরের ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালিক ফেরদাউস আলম ওরফে চিকন বাবু ঘেরটি ছেড়ে দিয়েছেন।
ওই ঘেরের জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে তরিকুল মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। আর জমির মালিকরা চেয়েছিলেন তারা জমি ইজারা দিতে প্রকাশ্য দাম তুলবেন। সেখানে যিনি বেশি ইজারামূল্য দেবেন তাকেই তারা ইজারা প্রদান করবেন। এটি মানতে চাননি কৃষকদল নেতা তরিকুল। তরিকুলের লোকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল।
এমনকি তরিকুলের সহযোগী জামাল ও রাজুর নেতৃত্বে হত্যার ঘটনার ১৫ দিন আগে ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের জমির মালিকদের কারো কারো মারধর করা হয়। তরিকুলের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় তাকে।
এরপর তরিকুলের লোকজনই সেখানে হামলা চালায় এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। যেটি এখন রঙ লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক হামলার গুজবটি ইতোমধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
সূত্র নয়াদিগন্ত