সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
এক নজরে :
সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন অভয়নগর প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার সাত মাসে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৩৫ জন আটক সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

অভয়নগরে রাজনৈতিক দাপটে দখল করা খানজাহান আলী দীঘি ১৫ বছর পরে উদ্ধার : এলাকাবাসীর মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার:
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাশুয়াড়ী গ্রামের খানজাহান আলী দীঘি নামে খ্যাত সরকারি জলাসয় নিয়ে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তি জোরজুলুমে ও ক্ষমতার অপব্যবহারে দখল করে রাখায় ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের কোন শেষ নেই। ফলে সরকারি জমি সরকারের অনুকূলে রাখতে এলাকার সাধারণ মানুষ ব্যাপক সমাগম মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

আজ সোমবার সকাল ১১ টায় বাশুয়াড়ী দীঘির পাড়ে ওই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মানববন্ধনে প্রাই ৬ শতাধিক সাধারণ মানুষ স্কুলের শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক নারীরা মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে ভূমিদস্যু আক্তারুল পান্না নামের ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগানে এলাকা মুখরিত করে তোলেন। এসময় স্থানীয় উপস্থিত ব্যক্তিরা তাদের বক্তব্য বলেন, ১৯৬২ সালের ১ খতিয়ান, দাগ নং – ২৮৪৯ , জমির পারিমান – ৯.২৩ শতক, দিঘিরপাড়, ২৮৪৮ নং দাগে – ১০.৫৬ শতক জলাশয়, মালিক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের পক্ষে কালেক্টরেটর, যশোর।

উক্ত পর্চায় ২৮৪৯ দাগের অংশে (দিঘিরপাড়ে) চৈত্র মাসের পূর্ণিমায় তিন দিনের জন্য মেলা বসাতে বন্দোবস্ত দেওয়ার অধিকার কালেক্টরেটরের অনুকূলে দেওয়া আছে।

খুলনা জেলার ফুলতলা থানাধীন দামোদরের বাসিন্দা মোঃ সরোয়ার মোল্লা ১৯৬২ সালের ও পূর্ব থেকে মালিকানা দাবি করে বাশুয়াড়ী খাঁনজাহান আলী (রহ:) দিঘি দখলে রেখেছিলো। কিন্তু ৬২ সালের পর্চায় দেখা যায় দিঘির পাড়ের অংশ ২৮৪৯ দাগে ৯.২৩ শতক যশোর কালেক্টরেটরের নামেই আছে। তথাপিও দামোদরের বাসিন্দা সরোয়ার মোল্লা দিঘীরপাড়ের সম্পূর্ণ অংশ নিজে দখলে রেখেছিলো। আনুমানিক ১৯৭১ সালের দিকে সরোয়ার মোল্লা মৃত্যুবরণ করলে তার বড় পুত্র আখতারুজ্জামান পান্না মোল্লা দিঘিটি ভোগ করতেছিলো।

১৯৮৮ সালের মাঠজরিপের সময় বাশুয়াড়ীর এলাকাবাসী জানতে পারে উক্ত জমি যশোর কালেক্টরেটর এর নামেই আছে। এটা জানতে পেরে পান্না মোল্লাকে এলাকার মানুষ দিঘী থেকে উচ্ছেদ করে।

এলাকাবাসী দিঘিটি দখল নিয়ে জনাব কামাল ফারাজি নামক এক ব্যক্তিকে লিজ দেয়। লিজ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এলাকার মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দানসহ উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করতে থাকে। এর মধ্যে পান্না মোল্লা ৬২ সালের রেকর্ড সংশোধনের জন্য আপিল করে, ১৯৯৬ সালে সেই আপিলটি খারিজ হয়ে যায়। তিনি এক নম্বর খতিয়ান এর ২৮৪৮ দাগের জলাশয় কে পুকুর হিসেবে চিহ্নিত করে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামে রেকর্ড করে নেয়। ৯৬ সালে খারিজ হওয়া মামলার বিরুদ্ধে ৯৭ সালে পুনরায় তৎকালীন খুলনার কমিশনার ভূমি বরাবর রিভিউ মামলা করেন। উক্ত রিভিউ মামলায় বাশুয়াড়ী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কাউকেই হাজির হতে দেননি, ফুলতলা থেকে ভয় ভীতি দেখিয়ে এমনকি মারধর দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে একতরফা রায় করিয়ে নেয়। এবং পুনরায় দখলে চলে আসে।

এরপর এলাকাবাসী ৯৯ সালে সহকারী জজ অভয়নগর কোর্টে রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা রুজু করে। মামলা নং ৩৭/৯৯.

যে মামলাটি বর্তমানে চলমান আছে। ২০০১ সালে উক্ত মামলার ভিত্তিতে এলাকাবাসী পান্না মোল্লাকে দখল উচ্ছেদ করে।

পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে নোয়াপাড়া পীর বাড়ির সহায়তায় তৎকালীন সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুনরায় দিঘি দখল করে নেয়। তারপর থেকে ২০২৪ এ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত দিঘির পাড়ে পান্না মোল্লা একচ্ছত্র আধিপত্য করে রাখে। দিঘির পূর্বপাড়ে সপ্তাহে তিনদিন হাট বসে বহু বছর আগে থেকে। অনুমান ১৯৯০ সাল থেকে হাটের অংশ সরকার ইজারা দিয়ে আসছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকার ছাত্র ও যুবসমাজ দিঘিটাকে পূর্ণরূপে পুনরায় দখলে নেয়। আদালতে মামলা চলমান থাকার কারণে ছাত্র ও যুবসমাজ আজ সোমবার সকাল ১১ টায় অবৈধ ব্যক্তি মালিকানা বাতিল এর দাবিতে বিরাট এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। মানববন্ধনে এলাকার সকল ছাত্র-যুবক ও সর্বস্তরের শত শত মানুষ উপস্থিত হয়ে পান্না মোল্লার নামে অবৈধ মালিকানা বাতিল করে রাস্ট্রের অনুকূলে আনার দাবি তোলে।

উল্যেখ্য পীর খঁনজাহান আলী (রঃ) এর জীবনইতিহাস থেকেও জানা যায় উক্ত দিঘিটি পীর খঁনজাহান আলী (রঃ) এর দিঘি। ওই মানববন্ধনে এসময় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন আলহাজ্ব মকবুল হোসেন সরদার, মুন্সি মনিরুল ইসলাম, মাওলানা হাফিজুর রহমান, মুন্সি রেজওয়ান, মোঃ রফিকুল সরদারসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোঃ হাবিবুর রহমান দশম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ মোমিন উদ্দিন প্রমুখ।



Our Like Page