গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা:
আ’লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে বদলিকৃত সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ-২ এ এখনো যোগদান করেননি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর কার্য সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন। গত ১০ নভেম্বরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করার কথা থাকলেও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীনের যোগসাজসে এখনো বহাল তবিয়তে সাতক্ষীরাতে অফিস করছেন জাহাঙ্গীর।
ফলে বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেতরে ও বাইরে চলছে গুঞ্জন। অনেকেই বলছেন পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে শ্রমিকলীগ নেতা সাইফুল করিম সাবুর ছত্র-ছায়ায় নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতি করলেও এখনও সেই একই পন্থা অবলম্বন করছে জাহাঙ্গীর হোসেন। আসলেই বর্তমানে এই জাহাঙ্গীর হোসেনের ক্ষমতার উৎস কি? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ-১, বাপাউবো, সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ-২ বাপাউবো, সুনামগঞ্জ এর অধীন হাওড় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এর নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য বোর্ডের কাজের স্বার্থে জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বরত ২১ জন কার্য সহকারীকে গত ৬ নভেম্বর ৬(ছয়) মাসের জন্য সুনামগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মচারী পরিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে গত ১০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সংযুক্তিকৃত দপ্তরে আবশ্যিকভাবে যোগদান করতে বলা হয়।
তবে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ এর কার্য-সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে ১০ নভেম্বরের মধ্যে সুনামগঞ্জে যোগদান করেননি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ঠ কয়েকজন কর্মচারী বলেন সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবুর ছত্রছায়ায় জাহাঙ্গীর হোসেন হয়েছিলেব জাতীয় শ্রমিকলীগের অন্তর্ভুক্ত ‘জাতীয় পানি উন্নয়ন শ্রমিক কর্মচারী লীগ’ এর সহ-সভাপতি। শ্রমিকলীগ নেতা সাইফুল করিম সাবু ও শহরের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের যোগসাজসে সাব কন্ট্রাক্টরী করে অবৈধভাবে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কিনেছেন কোটি টাকা মুল্যের কয়েকটি বেকু গাড়ি। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর হোসেনকে সাতক্ষীরায় রাখার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন। আর জাহাঙ্গীর হোসেন নিজে থাকার জন্য নানান ধরণের তদবীর শুরু করেছেন।
সাতক্ষীরা শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় তৈরী করছেন কোটি টাকা মুল্যের আলিশান বাড়ি। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১২ বছর ধরে নিজ জেলায় চাকুরীর কারণে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তিনি মনে করেন নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি।
এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে কোন তথ্য কোন সাংবাদিক নিতে গেলে তার সাথে জাহাঙ্গীর হোসেন খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি কয়েক বছর আগে সাবেক মানবজমিনের সাংবাদিকসহ কয়েকজন সাংবাদিককে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেতরে মারপিট করা হয়। তার নেতৃত্ব এই জাহাঙ্গীর হোসেন দিয়েছিলেন।
বর্তমান সরকারের আমলেও যদি পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে থাকে তবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বিনির্মাণ কখনো সম্ভব হবেনা। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দুদকসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য-সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন হুমকির স্বরে বলেন, এটা আপনাকে কে বলেছে আমি শুনতে চাচ্ছি। আমার যাওয়া ও না যাওয়া নিয়ে আপনার (সাংবাদিকের) এত ইন্টারেস্ট কেন? আপনার অফিস কোথায়? এটা আমার অফিসের ব্যাপার। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বলবে। আমি বলতে পারবো না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, ‘কার্য-সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেনের রোববারের (১০ নভেম্বর) মধ্যে যোগদানের নির্দেশনা থাকলেও তিনি মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) পর্যন্ত যোগদান করেননি। আমি এ ব্যাপারে আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবো।’
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেন এখনও সুনামগঞ্জ যায়নি। এখনও বিষয়টি দাপ্তরিক সিস্টেমের মধ্যে আছে।