চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি :
আলমডাঙ্গায় মোটরসাইকেলসহ সবুজ নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আলমডাঙ্গা উপজেলার গড়চাপড়া-কাশিপুর সড়কের গজারিয়া মাঠের বিজন মেহগনি বাগান থেকে পুলিশ গতকাল সকালে মোটরসাইকেল চাপা দেওয়া অবস্থায় পোড়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিন যুবককে থানা হেফাজতে নিয়েছে। তাদেরকে বিরামহীন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নিহত সবুজ (২১) ডাউকি ইউনিয়নের বাদেমাজু গ্রামের গরু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীনের ছেলে। তিনি পুরাতন মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন।
জানা যায়, গত পরশু সন্ধ্যায় জনৈক অনিকের ফোনকল পেয়ে সবুজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। পরে রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। নিহত সবুজের বোন জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে সবুজের মোবাইলফোনে কল এসেছিল। সে সময় সবুজের মা ফোনকল রিসিভ করতে চাইলে সবুজ নিজেই গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।
ওইদিন বিকেলে এক ব্যক্তি নিজেকে অনিক নামে পরিচয় দিয়ে সবুজকে ফোন করে মোটরসাইকেল কেনার জন্য দেখা করতে বলে। সবুজ তখন তার ব্যবসায়ী পার্টনার জিহাদকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, একজন ব্যক্তি ডিসকভার ১২৫ মডেলের মোটরসাইকেলটি কিনতে চায় এবং তাকে গাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বলে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সবুজ মোটরসাইকেলটি নিয়ে বের হন। এরপর থেকেই তার সাথে আর কারো যোগাযোগ ছিল না। সকালে সবুজের পরিবার ভয়াবহ দুঃসংবাদটি জানতে পারে।
সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়াও র্যাব, ডিবি ও পিবিআইসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছেন। গভীর রাত অবধি পুলিশের নানা ইউনিটের সদস্যরা একাধিক স্পটে নেপথ্যে উদঘাটনে কাজ করছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে আগুনে পোড়ানো সবুজের লাশ প্রত্যক্ষ করেন। ধারণা করা হচ্ছে আঘাত করে যুবককে হত্যার পর নির্জন মাঠের মেহগনি বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে নিহত যুবকের শরীরের উপর মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে হত্যাকান্ডের প্রমাণ নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকটি টিম ভিন্ন ভিন্ন মোটিভ নিয়ে কাজ করছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রামসূত্রে জানা যায়, সবুজ ছিলেন বেশ নম্র ও ভদ্র। গ্রামে কিংবা শহরে কারও সাথে কোন দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ ছিল না। সবুজ ইতালি যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে দালালকে টাকাও দিয়েছিলেন। ইতালি গিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে হবে, তাই ইলেক্ট্রিসিটির কাজ শিখেছেন। ঘটনার দিনও বিকেল অবধি ইলেক্ট্রিকের কাজ করে বাড়ি ফেরেন। ইলেক্ট্রিশিয়ানের পাশাপাশি তিনি পুরাতন মোটরসাইকেল কেনা বেচাও করতেন।
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে সবুজের লাশ গতকাল রাতেই নিজ বাড়ি নেওয়া হয়। রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে, নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিন যুবককে থানা হেফাজতে নিয়েছে। তারা হলেন নিহত সবুজের এক সময়ের পার্টনার বাদেমাজুর সৈকত, বর্তমান পার্টনার বন্ডবিলের জিহাদ ও মোটরসাইকেল মেকানিক সাগর। জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানালেও তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তা প্রকাশ করেনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানায় নেয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কারণ উদঘাটন সম্ভব হবে।
তবে নিহত সবুজের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো কোন এজাহার দায়ের করা হয়নি। আজ এজাহার দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।