বিশেষ প্রতিবেদক :
যশোরের শিল্প শহর নওয়াপাড়ার মজুমদার অটো রাইস মিলের বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই আমডাঙ্গা খালে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে খালের পানি।লাইসেন্স ও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েগেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও খালের পানি দিয়ে তাঁরা গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করতেন। দূষণ ও দুর্গন্ধের কারণে এখন খালের পানি ব্যবহার করা যায় না সাথে সাথে পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। খালের পানি মাছের ঘেরে প্রবেশ করে ঘের ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এলাকা বাসীর দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।
খোজ নিয়ে দেখা গেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের অধিনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন (লিমা) এর লাইসেন্স ও মেয়াদোত্তীর্ণ।
পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আমডাঙ্গা খাল। বর্ষায় পানি বেশি থাকলেও শুকনো মৌসুমে খাল মরা খালে পরিণত হয়। প্রায় কয়েক বছর আগে ভাঙ্গাগেট আমডাঙ্গা এলাকায় চিত্য মজুমদার নামের এক ব্যবসায়ী মজুমদার অটো রাইস মিলস লিঃ স্থাপন করেন। ভৈরব নদ থেকে মিলটির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। আমডাঙ্গা খাল টি ভৈরব নদে গিয়ে মিশেছে।
আজ রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মিলের সামনে দিয়ে আমডাঙ্গা খাল রয়েছে। মিলের পানি ও বর্জ্য ওই খাল দিয়ে ভৈরব নদে যাচ্ছে। পানির রং কালো এবং এর ওপর কালো বর্জ্য ভাসছে। নর্দমাটি খালের যে স্থানে পড়ছে, সেখানকার আশপাশের পানির রংও কালো হয়ে যাচ্ছে।
আমডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ইমরান বলেন, ‘জন্মের পর থেকে এ এলাকায় বসবাস করছি। আগে এই খালের পানিতে গোসল করতাম। মাঝে মাঝে মাছও ধরতাম। এখন আর কিছুই করা যায় না। মাছ তো দূরের কথা, একটি ব্যাঙও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খাল পাড় সংলগ্ন মাছের ঘের ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, ‘খালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে মিলের পানি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ওই মিলের দূষিত পানি খালে মিশছে। বর্তমানে আমাদের এলাকার অধিকাংশ মাছের ঘের পানিতে ডুবে গেছে। খালের পানি অবাধে ডুবে যাওয়া ঘের গুলোতে প্রবেশ করছে। এতে অসংখ্য মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ঘের ব্যবসায়ীরা এমনিতে প্রাকৃতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আবার যা আছে তাও খালের দূষিত পানি প্রবেশ করে সে গুলোও মরে যাচ্ছে। আমরা কয়েকজন মিলের মালিককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি কোন প্রকার কর্নপাত করে না। তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
মিল তত্ত্বাবধায়ক কারী মালিক চিত্য মজুমদার এর শ্যালক দিলিপ হালদার বলেন, ‘মিলের পানি খালে নামলে কোন সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকলে দুগন্ধ হয় এই ছাড়া কিছুই হয় না। সরকার পানি ফেলতে বারন করেছিল কিন্তু সরকার সেটা আবার উঠায় নিছে। আমাদের ফেলা পানি মাছের ঘেরে যাচ্ছে না। আপনাদের ভুল তথ্য দিচ্ছে এলাকা বাসি। পানি ঘেরে ঢুকছে এটা আমরা কোন ভাবেই মানবো না। আপনারা আসেন দেখে যান। এখনো আসেন আবার শুকনো সময় ও আসেন কোন প্রকার সমস্যা হয় না। আমাদের কাছে খালে পানি ফেলার অনুমতি আছে। আপনারা পরিবেশ অধিদপ্তরে খোজ নেন।
যশোরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমদাদুল হক বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। খাল, নদি বা খোলা যায়গায় অটো রাইস মিলের দূষিত পানি ফেলা অনুমতি দেওয়া প্রশ্নই ওঠে না। ‘প্রত্যেক শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তাদের নিজস্ব গণ্ডির মধ্যেই থাকতে হবে। বর্জ্য ড্রেন বা নর্দমায় ফেলা যাবে না। অটো রাইস মিলের ক্ষেত্রে গরম পানি, ছাই ও ময়লা প্রতিষ্ঠানটির চত্বরে নিজস্ব পুকুর বা গর্ত করে রাখতে হবে। আমরা এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিব।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহি অফিসার কে. এম. আবু নওশাদ বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্তা নেওয়া হবে। আমি বদলি হয়ে গিয়েছি। পরবর্তিতে যিনি আসবেন তিনাকে বিষয়টি জানাবো ব্যবস্তা নেওয়ার জন্য।