আতিকুর রহমান সাগর :
বাংলাদেশের চরাঞ্চলগুলোর মধ্যে ভোলার চরফ্যাসন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মহিষের দুধের জন্য বিখ্যাত। শীত মৌসুমে এখানকার খাঁটি মহিষের দুধ ও দধির চাহিদা বাড়তে থাকে। চরফ্যাসনের দধি দেশের ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি এটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা এই অঞ্চলের ঐতিহ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
চরফ্যাসনের মহিষের দুধ স্বাভাবিকভাবেই ঘন এবং খাঁটি। এই দুধ থেকে তৈরি দধি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, বরং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। স্থানীয়দের মতে, এই দুধ ও দধি কোনো কৃত্রিম উপাদান ছাড়াই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়।
স্থানীয় দুধ ব্যবসায়ী রিপন বলেন,
“আমাদের মহিষগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পালন করা হয়। দুধ ও দধির মান ভালো হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।”
শীতের সময় দুধ ও দধির চাহিদা বাড়লেও উৎপাদনের মৌসুমভিত্তিক তারতম্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ মাসে দুধের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকার বেশি হয়ে যায়। তবে বর্ষায় আষাঢ়-শ্রাবণে উৎপাদন বেশি থাকায় দাম ৩৫-৫০ টাকায় নেমে আসে।
চরফ্যাসনের দধি তৈরিতে কারিগররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দুধ থেকে দধি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সম্পন্ন হয়। দধি প্রস্তুতকারক মো. জামাল মোল্লা বলেন,
“আমরা দধি তৈরির সময় কোনো কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করি না। খাঁটি ও প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় এর চাহিদা বেশি।”
চরফ্যাসনের দধি এখন আর শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। এর স্বাদ ও মানের জন্য এটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। সম্প্রতি ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দধি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, এটি ২৯ নম্বর শ্রেণিতে জিআই-৫৫ হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
উন্নত প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে চরফ্যাসনের দধি আন্তর্জাতিক বাজারেও জায়গা করে নিতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা একমত যে, সরকারের সহযোগিতায় দধি রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠতে পারে।
চরফ্যাসনের দধি শুধু খাদ্য নয়, এটি স্থানীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির প্রতীক। জিআই স্বীকৃতি প্রাপ্তির ফলে এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। শীতের মৌসুমে এই দধি দেশব্যাপী চাহিদার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। চরফ্যাসনের দধি এভাবেই ঐতিহ্যের সঙ্গে উন্নয়নের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে।