গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা:
শুনে অবাক হলেও সত্য যে, সাতক্ষীরার রাস্তা বিলীন হচ্ছে কলকাতায়। অর্থ্যাৎ সাতক্ষীরা জেলায় কলকাতার খাল নামে একটি খাল রয়েছে । এই কলকাতার খালই ছিল ওপার বাংলার জলপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে কলকাতার খালগর্ভে বিলীন হচ্ছে সাতক্ষীরা সদরের বাগমারীর এলাকার একটি রাস্তা। এ সড়কে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২০২৩ সালে সমাপ্ত হওয়া খালের পাশে বাগমারী রাস্তাটির অর্ধেকের বেশি অংশ জোয়ার-ভাটায় ভাঙতে শুরু করে। এখন যে কোনো মুহূর্তে সড়কের সবটাই খালগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এদিকে, এই কলকাতার খালের সংযোগস্থলে দেয়া হয়েছে আড়াআড়ি বাঁধ। যার ফলে এ সড়কের বহু জায়গা ভেঙে তলিয়ে গেছে খালে। ফলে গোটা এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তাটি খালগর্ভে বিলীন হওয়ায় ব্যাহত হবে শিক্ষা কার্যক্রম। বিঘ্নিত হবে ব্যবসা বাণিজ্য। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে বিপাকে পড়ছেন সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তিও। সিএস ম্যাপ না দেখে চর ভরাটে জমিতে রাস্তা করায় কলকাতা খালের পাশে রাস্তা ভেঙে বিলীন হচ্ছে। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তাটি ভাঙলেই প্লাবিত হবে অন্তত একডজন গ্রাম।
রুহুল কুদ্দুস জানান, এই সড়কটি ভাঙলে তিন উপজেলার যোগাযোগের রাস্তা কলকাতার খালে ভেসে যাবে। আর এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে খালের গতি আটকে জোয়ার বৃদ্ধির কারণে খালের দুইধারেই পাকা রাস্তা ভাঙনের কবলে পড়েছে।
আব্বাস আলী জানান, রাস্তাটি ভাঙলে শুধু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে তা নয়, কলকাতার খালে প্লাবিত হবে শত শত ঘরবাড়ি, ভেসে যাবে ফসলি জমি, মাছের ঘের সবকিছু। রাস্তাটি রক্ষায় এখনই ব্যাবস্থা গ্রহণ না করলে বড় বিপদ আসন্ন। পরে সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ বলেন ‘স্থানীয় খালের গতি আটকানোর কারণে এই দুর্দশা সৃষ্টি হয়েছে। এলজিইডি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছে। উপজেলা এলডিইডিকে বিষয়টি দেখে করণীয় নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী ও খাল খননের কাজে হাত দেয়ায় খাল ও নদী প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কলকাতা খাল খনন করায় রাস্তাটি ভেঙে যাচ্ছে। তাছাড়া আড়াআড়ি বাঁধ দেয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যবস্থা নেবেন; একইসঙ্গে ভবিষ্যতে খাল ও নদীর পাশে রাস্তা নির্মাণে সমন্বয় করা হবে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২৩ সালে এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাতক্ষীরা সদরের বাগমারীর ১৭০০ মিটার রাস্তার মধ্যে ৪০০ মিটার রাস্তা বছর পার হতে না হতে ভেঙে গেছে কলকাতা খালের জোয়ার ভাটায়।