সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন
এক নজরে :
সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন অভয়নগর প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার সাত মাসে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৩৫ জন আটক সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

সাবেক সংসদ রণজিৎ রায় ও তাঁর স্বজনের সম্পদ বেড়েছে হাজার গুণ, দুদকের অনুসন্ধান শুরু

বিশেষ প্রতিবেদক:
যশোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জানান, সাবেক যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, দুদকের কাছে সাবেক যশোর-৪ আসনের সংসদ সদদ্য বিরুদ্ধে রনজিত কুমার রায়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। রনজিত কুমার রায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে আরো অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা সোনা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
অভিযোগ আছে, সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় যে সম্পদের হিসাব উল্লেখ করছেন, সে অনুযায়ী যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সাবেক এই এমপির ১৩৩ গুণ ও স্ত্রী নিয়তি রায়ের ২৬৩ গুণ সম্পদ বেড়েছে। বাস্তবে রণজিৎ রায় ও তাঁর স্বজনের সম্পদ বেড়েছে হাজার গুণ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি।
তিনবারের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় আওয়ামী লীগের শাসন আমলে অবৈধভাবে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এমপি হওয়ার আগে আধাপাকা টিনের ঘরে বসবাস করলেও ১৫ বছরে নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। অসংখ্য গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক হয়েছেন তিনি। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, সরকারি বরাদ্দ লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যও আলোচিত ছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে রণজিৎ রায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বন্ধ পাওয়া গেছে তাঁর স্ত্রী নিয়তি রায় ও ছেলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজীব রায়ের নম্বরও।
সাবেক এ এমপির অবৈধ সম্পদ অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য। তিনি, তাঁর স্ত্রী নিয়তি রায় এবং দুই ছেলে রাজীব রায় ও সজীব রায় অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্য নিরঙ্কুশ করার জন্যই তারা সভাপতি হন বলে অভিযোগ রয়েছে। টানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য থাকায় একচেটিয়া নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি।
বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হতো রণজিৎ রায়কে।
এ ছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্যে তাঁর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দুই উপজেলায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ও কলেজ সরকারীকরণের নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন তিনি। তাঁর অবৈধ টাকা আয়ের আরেকটি উৎস ছিল টেন্ডার বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কমিশন গ্রহণ।
রণজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে দলের নেতাকর্মী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি জোরপূর্বক ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখলের অভিযোগ রয়েছে।এ ছাড়াও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সরকারি ও খাসজমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর যশোর শহরের রেল রোডে একটি পাঁচতলা ও একটি তিনতলা রাড়ি রয়েছে। যশোরের লোহাপট্টিতে বাড়ি, নিউমার্কেটে দুটি ফ্ল্যাট, বাঘারপাড়ায় দুইতলা বাড়ি, বাঘারপাড়ার খাজুরায় চারতলা বাড়ি, ঢাকার মিরপুরে দারুস সালাম রোড়ে ২টি ফ্ল্যাট এবং দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত ও সল্টলেকে দুটি বাড়ি। যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ২২৫ একর জমি, খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ৫০ একর জমির ওপর মাছের ঘের কিনেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গোপন প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এক কোটি টাকা দামের একটি পাজেরো জিপ, দুই ছেলের ৬০ লাখ টাকার প্রাইভেটকার, স্ত্রীর ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেটকার ও ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। এ ছাড়াও কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন রণজিৎ রায় ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে জেস টাওয়ার শাখার জনতা ব্যাংকের একটি লকারে রক্ষিত ২শ ভরি স্বর্ণের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন রণজিৎ রায়। ওই সময় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের মালিকানা নিয়ে তোলপাড় হয়।



Our Like Page