সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
এক নজরে :
বর্ষা এবং জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করে পণ্য পাহারা দিচ্ছেন বন্দরের আনসার সদস্যরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বেনাপোলে অংশগ্রহণমূলক আইডিয়া প্রতিযোগিতা জুলাই পুনর্জাগরণ উপলক্ষে অভয়নগরে সেনাবাহিনীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত নওয়াপাড়া পৌরসভার কর নির্ধারক মোজাফফর সাময়িক বরখাস্ত সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন

সাতক্ষীরায় ছেলে-বৌমার হাতে নির্যাতনের শিকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক

গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা থেকে :
সাতক্ষীরায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অরবিন্দু মন্ডলকে (৭৩) হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছেলে বিশ্বনাথ মন্ডল ও বৌমা কবিতা মন্ডলের বিরুদ্ধে।

শনিবার (০২ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ওই স্কুল শিক্ষক তার নিজ বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হন। সেই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুলিশ আসার খবর শুনে নির্যাতনকারী বৌমা কবিতা মন্ডল স্থানীয় ইউপি সদস্যের ছেলে সুদীপ্ত মন্ডলের মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। আর ছেলে বিশ্বনাথ মন্ডল গ্রামের মধ্যে আত্মগোপন করে।

নির্যাতিত অরবিন্দু মন্ডল বাঁশতলা রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক।

নির্যাতনের শিকার অরবিন্দু মন্ডল জানান, ১৯৭২ সালে তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি বাঁশতলা রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দুই ছেলের মধ্যে বিশ্বজিৎ মন্ডল বাড়িতে থাকে। ছেটে ছেলে সঞ্জীব মন্ডল ভারতে থাকে। ২০১০ সালের ৯ জুন তিনি (অরবিন্দু) অবসরে যান। ক্রমশঃ তার শ্রবণ শক্তি হারিয়ে যায়। বড় মেয়ে ভারত থেকে তাকে একটি শ্রবণযন্ত্র কিনে দেন। এরপর থেকে তার ছেলে ও পুত্রবধু তাকে ভাল চোখে দেখতো না। তাকে কারণে অকারণে নির্যাতন করে আসছে। গত বছর তার স্ত্রী চপলা মন্ডল মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই রান্না করে খান। ছোট ভাই সুভাষ মন্ডল, আত্মীয় স্বজন বা প্রতিবেশীরা তাকে খেতে দিতে চাইলেও ছেলে ও পুত্রবধূর গালাগালির কারণে তিনি নিজেই রান্না করে খান।

০২ নভেম্বর শনিবার সকালে তাকে বাড়ির উঠানে ফেলে মশারির নেট দিয়ে পুত্রবধু ও ছেলে তার হাত ও পা বেঁধে মারপিট করে। পুত্রবধু তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ নিয়ে গত এক বছরে আটবারে তাকে মারপিট করেছে ছেলে ও পুত্রবধূ।

তিনি বলেন, ছেলে অরবিন্দুর দুই ছেলে রাজ পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে ছোট ছেলে দ্বীপ । তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাছাড়া সন্তানের বিরুদ্ধে শিক্ষক পিতা মামলা করে কিভাবে?

অরবিন্দু মন্ডলের মেয়ে অঞ্জনা মন্ডল ও শান্তনা মন্ডল জানান, বাবার গচ্ছিত দেড় লাখ টাকা দুই দফায় হারিয়ে যায়। পুত্রবধু কবিতা ওই টাকা চুৃরি করেছে বলে বাবা ধারণা করে আসেন। ওই টাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তাষ মন্ডলের কাছে সুদে খাটাচ্ছে বৌদি কবিতা বলে তারা জেনেছেন। যে কারণে সন্তোষ মন্ডল ও তার পরিবারের সদস্যরা বাবাকে নির্যাতনে কোন বাধা দেন না। উপরন্তু বাবা এখান থেকে চলে গেলে তারা খুশী হন। আগে যে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হতো সেই দড়ি বাবা অন্যত্র লুকিয়ে রাখেন। তাই শনিবার সকালে পূর্ণিমার বাড়ি থেকে মশারির নেট এনে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। বাবাকে নির্যাতনের ব্যাপারে প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা কথা বলতে গেলে বউদি কবিতার আত্মীয় খগেন্দ্র নাথ মন্ডল, তার স্ত্রী পূর্ণিমা তেড়ে আসেন।

স্থানীয়রা জানান, কবিতা মন্ডলের সঙ্গে সন্তোষ মন্ডলের শুধু টাকা সুদ খাটানোর সম্পর্ক না। তাদের মধ্যে রয়েছে পরকিয়া প্রেম। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় প্রতিবেশি ও স্বজনরা কবিতার কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের পাত্র। তবে বাড়িতে পুলিশ আসলে মেম্বরের ছেলের মটর সাইকেলে পালিয়ে যায় কবিতা।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য সন্তোষ মন্ডল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কবিতার টাকা সুদে নেওয়া বা তার সঙ্গে কোন অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথা সঠিক নয় উল্লেখ করে বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি অমানবিক। এ নিয়ে কয়েকবার শালিস হয়েছে।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজের একটা বাস্তব অথচ নিষ্ঠুর চিত্র এটি। ভিডিওটা দেখার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। বর্তমান ছেলে ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।’

পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান পুলিশ সুপার।



Our Like Page