সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
এক নজরে :
বর্ষা এবং জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করে পণ্য পাহারা দিচ্ছেন বন্দরের আনসার সদস্যরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বেনাপোলে অংশগ্রহণমূলক আইডিয়া প্রতিযোগিতা জুলাই পুনর্জাগরণ উপলক্ষে অভয়নগরে সেনাবাহিনীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত নওয়াপাড়া পৌরসভার কর নির্ধারক মোজাফফর সাময়িক বরখাস্ত সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন

মোংলা বন্দরের প্রভাবশালী ফিরোজের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ : ১ মাসেও কার্যকরী হয়নি

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
মোংলা বন্দরের দোর্দন্ড প্রভাবশালী সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কর্তৃপক্ষের জুনিয়র অফিসার মোঃ ফিরোজের দুর্নীতি, অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা ও চাকুরি শৃংখলা পরিপন্থি কর্মকান্ড দিনকে দিনই বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাকরিতে যোগদান করার কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি সিবিএর প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, বদলী, অবসরে যাওয়া ব্যক্তিদের ফাইলসহ বিভিন্ন কাজের তদ্বিরের নামে দু’হাতে কামিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। ১৯৯৪সালে সামান্য এলডিএ কাম টাইপিস্ট পদে চাকরিতে যোগদান করে ৩০বছরের ব্যবধানে তিনি এখন নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার মালিক। নিজ ভায়রার নামে হিরণ পয়েন্টসহ বিভিন্ন নৌপথে বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিংয়ের নামে কারচুপির মাধ্যমে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। তৈরী করেছেন নিজ ও স্বজনদের নামে একাধিক আলিশান বাড়ি ও কিনেছেন গাড়ি। ব্যক্তিগত এ গাড়িতে আবার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের লোগো লাগিয়ে অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি কওর খাটাচ্ছেন নানা প্রভাব। ক্ষমতার মোহে প্রথমে করেছেন বিএনপি। এরপর বিএনপি থেকে ক্ষমতায় লোভে যোগ দিয়েছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ পতনের পর তিনি এখন আবার কর্মচারী থেকে কর্মকর্তায় পদোন্নতি পেয়েও বিএনপিতে যোগদানের চেষ্টা করে পুনরায় সিবিএ নেতা হওয়ার জন্য জোর স্বপ্ন দেখছেন। যদিও বিএনপি তাকে পুরোপুরিভাবে তাদের দলে এখনও পর্যন্ত ভিড়ায়নি। এর আগে বহুবার এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে নানা অভিযোগ দেওয়া হলেও তাতে তার কিছুতেই কিছু হয়নি। সবই রয়েছে বহাল তবিয়তে।বন্দরের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। অবশ্য এ ব্যাপারে মোঃ ফিরোজ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা ও চাকুরি শৃংখলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে নিজের জড়িতের কথা অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তিনি বৈধভাবে ধন সম্পদ বানিয়েছেন। প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ১৯৯৪সালে মোঃ ফিরোজ চাকরিতে যোগদান করার পরের বছর সিবিএতে কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি সহ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, অতিরিক্ত সম্পাদক থেকে সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর মাঝে নির্বাচনে অবশ্য তিনি কয়েকবার হেরেও যান। সর্বশেষ তিনি ২০১৯সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ২০২১সালের নির্বাচনে একই পদে হেরে যান। এখন আবার নতুন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তিনি অংশ নিয়েছেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরই মধ্যে মোঃ ফিরোজের জুনিয়র অফিসার হিসেবে পদোন্নতি হয়। এ পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তা হলেও তিনি শ্রমিক কর্মচারীদের নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার খায়েশ ছাড়েননি। আর এ নিয়ে বন্দরের সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ ইস্যুতে বন্দরে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্ট হয় মামলা আর পাল্টা মামলা। এ মামলা জটিলতায় এখন পর্যন্ত নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সিবিএ নির্বাচনের অসন্তোষকে পুঁজি করে সিবিএর এই সাবেক নেতা ও বর্তমান জুনিয়র অফিসার মোঃ ফিরোজ গত ৭অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় দলবল নিয়ে জোর করে সিবিএ অফিসে অবৈধভাবে একটি সভা করে বর্তমান নেতৃবৃন্দকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অফিসের কম্পিউটার রুমে তালা মারাসহ মূল্যবান নথি ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সরিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তার নেতৃত্বে সিবিএ ভবন দখলের চেষ্টা চালানো হয়। পওে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে সে সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরবর্তিতে জুনিয়র অফিসার ফিরোজকে এ বিষয়গুলো নিয়ে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে গত ১৫অক্টোবর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ নুরুজ্জামান ৭কার্য দিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে শোকজ করেন। পাশাপাশি পুরো বিষয়গুলো নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেন। পরবর্তিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩নভেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে উপসচিব এইচ এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মোঃ ফিরোজের বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে সিবিএ অফিস দখল করে তালা দেওয়াসহ চাকুরী শৃংখলা পরিপন্থি কর্মকান্ড বিঘ্ন সৃষ্টি করায় বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ৬নভেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ আদেশ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছায়।
এদিকে মজার ব্যাপার, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা জারীর প্রায় মাসের কাছাকাছি হতে চললেও এখন পর্যন্ত তা আদেশ কার্যকরী করা হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা রহস্য ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জুনিয়র অফিসার ফিরোজ মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ যেন বাস্তবায়িত না হয় সে জন্য বন্দরের শীর্ষ মহলে নানা দেনদরবার ও তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এর আগেও বহু অভিযোগে বিভাগীয় মামলা খেলেও তা প্রভাব আর তদ্বিরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নিস্পত্তি করে ফেলেছেন। যে অভিযোগেরই তদন্ত আসুক না কেন তিনি তা কৌশলে ম্যানেজ করে নিজেকে পার করে নেয়। এবারও তিনি একই প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন যেভাবে হোক নৌ মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা ধামাচাপা দিয়ে নিজেকে রেহাই দেওয়ার।
জুনিয়র অফিসার মোঃ ফিরোজ এ ব্যাপারে বলেন, তিনি গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী এডহক কমিটি গঠন করে সিবিএ ভবনে সভা করেছেন। তবে সেখানে কোন বিশৃংখলা পরিবেশ সৃষ্টি করেননি। প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ নুরুজ্জামানের দৃষ্টি আবর্ষণ করা হলে তিনি মোঃ ফিরোজের বিষয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। বিধি অনুযায়ী এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল প্রক্রিয়া চলছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত ফাইলটি তার দপ্তরে রয়েছে। খুব দ্রুত সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Our Like Page