সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
এক নজরে :
সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন অভয়নগর প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার সাত মাসে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৩৫ জন আটক সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

বাবার পর এবার ছেলেকে হত্যা, অভয়নগরে অপহরণের পর সাবেক কাউন্সিলরকে কুপিয়ে হত্যা

বিশেষ প্রতিবেদক:
যশোরের অভয়নগরে জিয়া উদ্দিন পলাশ (৪৯) নামে সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাকে অপহরণের পর পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত ৯.৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার বেঙ্গল রেলগেট সংলগ্ন সাইদুর রহমান ঘাটের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রইস উদ্দিন (৩৮) নামে এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
নিহত জিয়া উদ্দিন পলাশ নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি একই ওয়ার্ডের নওয়াপাড়া মডেল কলেজ সংলগ্ন মৃত ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। আটক রইস উদ্দিন একই ওয়ার্ডের রেলবস্তির সিদ্দিক শিকদারের ছেলে।
নিহতের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান লেলিন বলেন, ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নওয়াপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। তৎকালিন সময় নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন তিনি। বাবা হত্যার বিচার আজও মেলেনি। এবার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী রইস উদ্দিন তার সহযোগিদের সঙ্গে নিয়ে বড়ভাই পলাশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। প্রথমে অপহরণ, তারপর টাকা নিয়ে ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিত্যক্ত ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। বাবা হত্যার বিচার মেলেনি, ভাই হত্যার বিচার মিলবে কি? এমন প্রশ্ন করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
নিহতের স্ত্রী শারমিন নাহার রত্না বলেন, ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় তেতুলতলা জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় পলাশ। এসময় বড় ছেলে তাহসিন (১০) ও ১৪ মাস বয়সি ছোট ছেলে তাইফকে আদর করেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে রইজ উদ্দিনের দুই সহযোগি বাড়িতে আসে। তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে পলাশের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলেন। এসময় মোবাইলে কথা হলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে পলাশ বলে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। যেভাবে সম্ভব ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে ওই দুই যুবকের কাছে দিয়ে দাও। তা না হলে তারা আমাকে খুন করবে বলে মারপিট শুরু করেছে। তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছে প্রশ্ন করলে অপরপ্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। অপহরণের পর পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
তেতুলতলা জামে মসজিদের মুসল্লীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাগরিবের নামাজ শেষে সাবেক কাউন্সিলর পলাশ মসজিদ থেকে বেরিয়ে নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। এসময় একটি ভ্যানে রইস উদ্দিনসহ চার জন পলাশকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরে জানতে পারি পলাশকে অপহরণের পর পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক। পলাশ হত্যার সঙ্গে জড়িত এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গত ৫ আগস্টের পর থেকে বেপরোয়া। তাদের নির্যাতন ও চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হামলা ও মারপিটের শিকার হত হয়। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনা।
এলাকাবাসী জানায়. সাবেক কাউন্সিলর পলাশ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানার পর খোঁজাখুজি শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে রাত ৯.৩০ মিনিটের দিকে বেঙ্গল রেলগেটে পৌঁছালে রইস ও তার সহযোগিরা চিৎকার করে বলে, একটারে খেয়ে ফেলেছি, দেখি কারা উদ্ধার করতে আসে। সেই সময় বেঙ্গল রেলগেটের পাশে সাইদুর রহমান ঘাটের একটি পরিত্যক্ত ঘরের ভেতর রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় পলাশের সন্ধান মেলে। দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর উত্তেজিত এলাকাবাসী রইসকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। এসময় তার সহযোগিরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শোভন বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মৃত অবস্থায় সাবেক কাউন্সিলরের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। দেখে মনে হয়েছে নিহতের শরীরে লাঠি দিয়ে পেটানো ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। অতিরিক্ত আঘাতজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমাদুল করিম বলেন, সাবেক কাউন্সিলর জিয়া উদ্দিন পলাশকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রইস উদ্দিন নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। গণধোলাইয়ের শিকার ওই যুবককে পুলিশ হেফাজতে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ভোর রাতে যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবার থেকে মামলা দায়ের করা হয়নি। মামলা দায়েরের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যান্য অপরাধীদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) মাগরিবের নামাজ শেষে তেতুলতলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহত জিয়া উদ্দিন পলাশের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।



Our Like Page