সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
এক নজরে :
সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন অভয়নগর প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার সাত মাসে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৩৫ জন আটক সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

নিষ্কাশ‌নের পথ রুদ্ধ: জলাবদ্ধতায় নাকাল সাতক্ষীরাবাসী, বিপর্যস্ত জনজীবন

গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা:
কয়েকদিনের টানা বর্ষনের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার প্রায় দুই লক্ষ মানুষ। বিপর্যস্ত হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষের জীবন। পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা, ডু‌বে গে‌ছে বিশুদ্ধ পানির আধার, রাস্তার উপরে হাঁটু পানি, ঘরের ভেতরে পানি, রান্নাঘরেও পানি। সবমিলিয়ে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে মধ্যবিত্তের জীবনে। দু‌র্বিষহ হ‌য়ে উঠে‌ছে জনজীবন।
স্থানীয়‌রা জানান, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং পা‌নি নিষ্কাশ‌নের পথ বন্ধ ক‌রে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের গড়ে তোলায় বিগত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় ছয় থেকে আট মাস পানিতে হাবুডুবু খায় মানুষ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও জলাবদ্ধতা নির‌সনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো পূর্বপ্রস্তু‌তি গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
সরেজমিনে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমল্লারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, মাঠপাড়া, মুনজিতপুর, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্ন এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। জলাবদ্ধতা কবলিত এলাকার মানুষ ককশিটের ভেলা তৈরি করে যাতায়াত করছে।
পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকার আবুল হাসান বলেন, ড্রেন না করেই যে যার মত করে বাড়ি করছে। তৈরী করছে দোকানপাট। পৌর কর্তৃপক্ষ দেখাশোনা করলে এরকম বিপদে পড়তাম না। একটু জোরে বৃষ্টি হলেই আমার উঠোনে পানি দাড়িয়ে যায়। উঠোন উঁচু করতে গেলে ঘর ভেঙে নতুন করে বানাতে হবে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমার ঘরের ভেতরে পানি জমে গেছে। ড্রেন বলে কিছুই নেই। পাশেই খাল। অথচ পানি সরানোর পথ প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছে।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা মন্টু সরদার বলেন, দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে আছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ইটাগাছার বিলে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের করার কারণেই এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বদ্দিপুর কলোনী এলাকার সাজেদা বেগম বলেন, বৃষ্টি হলেই গত ১০ বছর ধরে ৩নং ওয়ার্ডে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ছয় থেকে আট মাস আমরা পানিবন্দি হয়ে থাকি। কিন্তু প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেয় না পৌরসভা। তাকিয়ে দেখেন বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটু পানি জমে আছে। রান্না ঘরে পানি। হাঁড়ি জ্বলা বন্ধ। ঘরের মধ্যে সাপ-পোকা-মাকড় ওঠে। দিনের বেলায় কোন রকমে বাড়ি থাকলেও রাতে সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র রাত কাটাই।
মাছখোলা গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের উঠোনে পানি জমে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত। গোয়ালঘরের মাঝ বরাবর পানি উঠেছে। ড্রেন না থাকায় সরছে।
সংবাদকর্মী শহীদুজ্জামান শিমুল বলেন, ৬নং ওয়ার্ডের কুখরালী উত্তরপাড়ার প্রধান রাস্তাটির দু’পাশের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরের ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়া এলাকার পানি আসে যে বিলে, সেই বিলের পানি বেরোনোর পথ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ঘের মালিকরা।
এছাড়া, জেলার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ভোমরা স্থলবন্দর। চলমান বৃষ্টিতে স্থলবন্দর সংলগ্ন অধিকাংশ সড়ক জলমগ্ন হয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীকে দায়ী করে শনিবার সকালে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। এতে সিএন্ডএফ নেতৃবৃন্দ জরুরী ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করলে বুধবার (৮ জুলাই) সকালে অঝোর বৃষ্টির মধ্যেও জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে যান ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, এই বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার বেশ কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উপজেলার বাজেট থেকে ৫০ কিলোমিটার সেচনালা ও খাল সংস্কার করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট। বেতনা নদী খনন চলমান রয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে শাল্যে ও কুঞ্জোডাঙির স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হবে। শহরের উপর দিয়ে প্রবাহমান প্রাণসায়ের খালে পৌরসভার পানি ফেলতে পারলে জলাবদ্ধতা কমে যাবে। এছাড়া ঘের মালিকদের পানি নিষ্কাশনের পথ উন্মুক্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।



Our Like Page