মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

মনিরামপুরে পরকীয়ায় জেরে গৃহবধূ শিল্পীর আত্মহত্যা না হত্যা : স্বামী পুলিশ হেফাজতে

রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনা গ্রামে প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে শিল্পী মল্লিক (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ কথা মানতে নারাজ শিল্পীর পিতা-মাতা ও ভাইয়ের। তাদের দাবী, শ্বাশুড়ীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামী ও শ^াশুড়ী নির্যাতন করে শিল্পীকে শ^াসরোধ করে হত্যা করেছে। পুলিশ কারও কথায় কান না দিয়ে শিল্পীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় স্বামী রনি রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন।

রবিবার রাত ৭ টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনা গ্রামে। জানা গেছে, চার বছর আগে যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল-রুপদিয়া গ্রামের অনন্ত মল্লিকের মেয়ে শিল্পী মল্লিকের সাথে উপজেলার হরিনা গ্রামের মাধব রায়ের ছেলে রনি রায়ের সাথে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সাড়ে ৩ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্থানীয়রা ও স্বামী রনির মা দীপ্তি রায় জানান, রনি রায় বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকান দেয়। সেখানে রনি ও শিল্পী মিলে ব্যবসা করে আসছিল। সেই সুবাদে গৃহবধু শিল্পী মল্লিক প্রতিবেশী ইমন রায় নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক জড়ায়। শুক্রবার রাতে শিল্পী ও ইমনকে স্বামী রনি তাদের আপত্তিকর কর্মকান্ড দেখে ফেলেন। এ সময় রনি ইমনকে মারপিট করে তার মোবাইল কেড়ে নেয় ও স্ত্রী শিল্পীকে বকাবকিসহ মারধর করে। পরদিন সকালে শিল্পী কাউকে কিছু না বলে বখাটে ইমনের বাড়িতে যায় নালিশ দিতে। এই যাওয়া নিয়ে স্বামী রনি ও তার শ^াশুড়ী মধ্যে শিল্পীর কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকে শিল্পী বাড়িতে একা একা নিরবতা পালন করে আসছিল। রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিল্পী সন্ধ্যা দেওয়ার কথা বলে নিজ কক্ষে গিয়ে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বলে স্বামী পক্ষ দাবী করেছেন।

তবে শিল্পীর আত্মহত্যার কথা মানতে নারাজ তার পিতা অনন্ত মল্লিক, মাতা লিলি মল্লিক ও একমাত্র ভাই মহিত মল্লিক। তাদের দাবী, শ্বাশুড়ী দীপ্তি রায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী গনেশ ডাক্তার নামে এক চিরকুমারের সাথে পরকীয়া করে আসছিল। শ^াশুড়ীর ওই কর্মকান্ড নিয়ে শিল্পী প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করে। যার কারনে স্বামী রনি ও শ^াশুড়ী বিয়ের পর থেকে শিল্পীকে নির্যাতন শুরু করে আসছিল। যার প্রমান শিল্পীর গলায় ও শরীরে বিভিন্ন ধরণের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিধায় স্বামী রনি ও শ^াশুড়ী দীপ্তি রায় মিলে শিল্পীকে শ^াসরোধ করে হত্যা করেছে। তারা শিল্পী হত্যার সুষ্ঠ বিচার দাবী করে বলেন, স্বামী রনি ও তার শ^াশুড়ী শিল্পীকে হত্যা করা ঘটনা ধাঁমাচাপা দিতে পরকীয়ার অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে পরকীয়ার অভিযুক্ত ইমন ও ডা: গনেশ ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবী করেন। এ ব্যাপারে দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী আলতাপ হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য দীপক কুমার রায় বলেন, মুলত পরকীয়ার জের ধরে গৃহবধু শিল্পী আত্মহত্যা করতে পারে বলে তাদের ধারনা।

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০শয্যা মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে স্বামী রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছি। বিষয়টি এখনও তদন্তধীন রয়েছে, তারপর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Our Like Page