সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
এক নজরে :
সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া: পিআইবিতে মোবাইল সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ অভয়নগরে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত যশোরে জুমার নামাজে সিইসি ; বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া বেনাপোলে বিজিবির অভিযানে বিভিন্ন রকম অবৈধ সামগ্রী আটক বাগআঁচড়া সাতমাইলে মুদিখানা দোকানে, ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বেনাপোল স্থলবন্দরে বিলাসবহুল মসজিদ ভবনের শুভ উদ্বোধন অভয়নগর প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার সাত মাসে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ ৩৫ জন আটক সীমান্তে মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্প পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

আজ অভয়নগরের ছেলে শহিদ আমিনুর রহমানের ২৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী

দক্ষিণ বাংলা ডেস্ক:
যশোরের অভয়নগর উপজেলার শহীদ মুহাম্মদ আমিনুর রহমানের ২৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ ২৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৯৬ সালের এই দিনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধে বন্দুকের গুলিতে আমিনুরকে হত্যা করা হয়। যা ছিল অতি বিস্ময়ের, বেদনাদায়ক ও অত্যন্ত ঘৃণ্য। শহীদ মুহাম্মদ আমিনুর রহমান ছিলেন যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার পায়রা গ্রামের মুহাম্মদ ওমর আলী গাজী এর ছেলে। তার পিতা কার্পেটিং জুট মিলে কর্মরত শ্রমিক ছিলেন। ৩ ভাই, ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শহীদ মুহাম্মদ আমিনুর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিএ অনার্স (শেষ বর্ষ) তে পড়তেন।

আমিনুর রহমানের শহিদ হওয়ার ঘটনার বিবরণ :
২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর এই সহিংস ঘটনার দৃশ্যপটে ছিল হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে দলীয় প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টাকারী ছাত্রলীগ (শা-পা) এবং নেপথ্যে ছিল দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও দলীয়করণের হোতা ভিসি প্রফেসর ইনাম-উল হক এবং তার সহযোগী আল কুরআন বিভাগের খাতা কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান, বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা একটি কুচক্রী মহল ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার।

কুখ্যাত ভিসি ৮ মে ১৯৯৫ এ নিয়োগের পর থেকেই শুরু করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চরিত্র ধ্বংসের কাজ। বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ এনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির শুরু করে দুর্নীতিবিরোধী দুর্বার আন্দোলন। দুর্নীত প্রতিরোধ কমিটি, শিক্ষা সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রশিবির একজন মেধাবী ছাত্রের পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ধর্মঘট, হরতাল, প্রশাসনিক অফিস ঘেরাও আন্দোলনের ডাক দেয়। ২৪, ২৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ছিল আন্দোলনের চরম পর্যায়। ভিসি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ছাত্রলীগ ও সরকারের সাথে আঁতাত করে এই আন্দোলনকে অন্য খাতে প্রবাহিত করতে আকস্মিকভাবে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। এদিকে সকল প্রকার সহযোগিতা ও মোটা অঙ্কের অর্থের আশ্বাস পেয়ে ছাত্রলীগের পূর্বের সন্ত্রাসী পরিকল্পনা সহজ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে আওয়ামী ও বামপন্থী কিছু শিক্ষকের ক্রমাগত ইন্ধনে সহিংস ঘটনার দ্রুত প্রকাশ ঘটে।

২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকেই চরম উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগ কুষ্টিয়াগামী সকল বাস জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের করে অপদস্থ। শিবিরের পক্ষ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে সকাল সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে। ঠিক এই সময় ঘাতকরা নিরস্ত্র শিবিরকর্মীদের উপর পৈশাচিক তাণ্ডবলীলা চালায়। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি জোহার নেতৃত্বে নিষিদ্ধ পার্টির সদস্য প্রায় ১৫০ জনের সশস্ত্র গ্রুপ হল দখলের অভিপ্রায়ে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে কমান্ডো স্টাইলে মেইন গেট, পুলিশ ফাঁড়ি গেট ও বিদ্যুৎ স্টেশনের প্রাচীর ভেঙে একযোগে স্মরণকালের জঘন্যতম হামলা শুরু করে। এলাকাবাসী কেঁপে উঠেন ভয়ে। তারা শিবির ও সাধারণ ছাত্রদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাদেরও ধাওয়া করে। এ সময় অত্যাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত ছাত্রলীগের নরপিশাচরা স্টেনগান, কাটা রাইফেল, এলএমজি, বন্দুক, শাটারগান, শটগান, পাইপগান দিয়ে অবিরাম গুলি বর্ষণ করতে করতে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা চালায় কয়েকবার। হামলার ব্যাপকতা ক্রমেই বিস্তার লাভ করে। এক পর্যায়ে আমিনুর রহমানসহ প্রায় ৩০-৩৫ জন শিবির নেতাকর্মী বুলেবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের তাজা রক্তে কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠের সবুজ চত্বর রক্তে লাল হয়ে যায়। শহীদ আমিনুর রহমানের আঘাত ছিল মারাত্মক। তার বুকে, নিম্নাংশে এবং পায়ে ২০ টির মতো বুলেটবিদ্ধ হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের নির্লিপ্ততা ও সম্পূর্ণ অসহযোগিতায় আহত ভাইদের দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। তারপরও অনেক চেষ্টার পর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটায় রাত ১২ টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমিনুর ভাইসহ আরো দু’জনকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৩ টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স পুনরায় হাসপাতালে প্রবেশ করে। যেখানে ছিল আমিনুর রহমান ভাইয়ের চিরতরে নিথর হয়ে যাওয়া শরীরটি। ঢাকায় নেয়ার পথে ফরিদপুরের কুমারখালী নামক স্থানে রাত ২টায় শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন আমাদের প্রিয় ভাই আমিনুর রহমান। চলে যান তার সবচেয়ে প্রিয় মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে।

শহীদ আমিনুর রহমান গ্রামের মাদরাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ৫ম শ্রেণীতে প্রথম গ্রেডে বৃত্তি পান। দাখিল পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৭তম স্থান অধিকার করেন। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি তিন ভাষায় তিনি চমৎকার লিখতে পারতেন। ফাজিলে অর্জন করেন প্রথম শ্রেণী। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন সততায় সমুজ্জ্বল এবং স্বতন্ত্র এক মানুষ। ধর্মীয় অনুশাসন মানতে স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন তিনি। শহীদের মা এখনও প্রশ্ন করে যান, ‘আমিনুরের পরীক্ষা শেষ হয়নি? আর কতদিন লাগবে? আমার আমিনুর কবে বাড়ি আসবে?

শহীদ আমিনুর রহমানের স্মরণীয় বাণী:
‘আমি একদিন একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি হব। আর আমার প্রতিবেশীকে দেব ইসলামী জ্ঞান উপহার। তারা যদি তার বদলে প্রকাশ করে কৃতজ্ঞতা তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া। কিন্তু তারা যদি বাঁকা চোখে তাকায় আর দেখায় শাস্তির ভীতি, আমি করব না কোনো পরওয়া। কারণ, আমি জানব আমার ঐ সত্য পথ তারা মেনে নিয়েছে এটা তাদের স্বার্থের শত্র“। তাই আমি পাচ্ছি এমনই বাঁকা চোখের চাহনি আর যতসব শাস্তির হুমকি ধমকি, যা পেয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব রাসূলে আকরাম (সা) আর আমি ও তার ওয়ারিশ। আমি কেন বাতিলের নিকট থেকে তা প্রতিদান স্বরূপ পাব না? তা ছাড়া তো বুঝবো আমার বিশ্বাসেও কাজে দুর্বলতা অবশ্যই বিরাজিত।’- আমিন, ১২-০৮-১৯৯৩

‘হে মানুষ তুমি তো এক মুসাফির, সফরে এসে তোমার সম্পদ আহরণের এতই বাসনা কেন? তুমি কি সফরের কথা ভুলেই গেলে? সফরের মূল লক্ষ্য তো জ্ঞান আহরণ ও সতর্কতা অবলম্বন। তোমার এত লোলুপদৃষ্টি কেন? তোমার এই দৃষ্টিই তো তোমাকে ধ্বংস করে ফেলবে, সুতরাং নিজেকে সামলাও। ঐ তাকিয়ে দেখ তোমার অগ্রজের কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। সফর নামের সার্থকতা বজায় রাখ। এ সফরের মহা সুযোগ আর কোন দিন পাবে না।’



Our Like Page